গোমাংস ভক্ষন বিরোধীদের প্রতি খোলা চিঠি

মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম

হিন্দু ভায়েদের জানকারীর জন্য বলছি এখনো আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালে মন্দিরে গায় বলি দেওয়া হয়। এবার আপনারা কি করবেন? সেই হিন্দুত্ববাদী রাক্ষসদের বলছি যারা গরুর মাংস খাওয়ার অপরাধে মুহাম্মাদ আখলাক ও তার পুত্রকে গরুর মাংস খাওয়ার অপরাধে ইঁট দিয়ে আঘাত করে মাথা থেঁতলে হত্যা করেছে তাঁরা কি পারবেন নেপালে হামলা করে সেই মন্দিরের পুজারীদের মাথা ইঁট দিয়ে থেঁতলে দিতে? আপনারা পারবেন না। 

নেপালে তো আপনাদের গোমাতাকে প্রতিদিন ভক্ষন করছে। সেক্ষেত্রে আপনারা কেন চুপ করে টুঙ্গি মেরে ঘরে বসে থাকছেন? গোমাতার প্রতি আপনাদের প্রেমকোথায় চলে যায়? সন্দেহ হয় সত্যিই কি আপনারা আপনাদের গোমাতাকে ভালবাসেন না সুস্পষ্ট ভন্ডামী?

হিন্দু ভায়েদের বলছি মুসলমানদের গরুর গোস্তের কাবাব খাওয়া দেখে আপনাদের যদি ধৈর্য্যের চ্যুতি ঘটে থাকে তাহলে বলি, ঐ দেখুন আপনাদের পুর্ব পুরুষগন স্মরণাতিত কাল থেকে বৌদ্ধ যুগের কাল পর্যন্ত প্রচুর পরিমানে গরুর গোস্ত ভক্ষন করতেন। দেখুন ব্যাস ঋষি স্বয়ং বলেছেন, রন্তিদেবীর যজ্ঞে একদিন পাচক ব্রাহ্মনগন চিৎকার করে ভোজন কারীদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন, মহাশয়গন! আজ বেশী মাংস ভক্ষন করবেন না, কারন আজ অতি অল্পই গো- হত্যা করা হয়েছে, কেবল মাত্র ২১০০০ একুশ হাজার গো হত্যা করা হয়েছে। (সাহিত্য সংহিতা, তৃতীয় খন্ড দ্রষ্টাব্য)

দেখুন হিন্দু ভায়েরা আপনাদের পুর্বপুরুষগন কি পরিমান গরুর মাংস ভক্ষন করতেন। ২১০০০ হাজার গরু হত্যা করার পরেও বলা হচ্ছে বেশী মাংস ভক্ষন করবেন না। তাহলে বেশী মাংস ভক্ষন করতে গেলে কত হাজার গরু হত্যা করা হত আপনারাই বুকে হাত দিয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন। মাথা গরম করলে হিসাব গোলমাল হয়ে যাবে।

সত্যানুসন্ধানী হিন্দু পন্ডিতগনের সিদ্ধান্ত এই যে বৈদিক যুগে ভারতীয় ঋষিগন রীতিমত গো-মাংস ভক্ষন করতেন। স্মার্তযুগের সায়াহ্ন পর্যন্ত তাদের মধ্যে গো-মাংস আহারের জের চলছিল। (সাহিত্য সংহিতা, ৪৭৬ পৃষ্ঠা)

বৌদ্ধযুগের পুর্ব পর্যন্ত হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বাপ দাদারা যে প্রচুর পরিমানে গরুর গোস্ত খেতেন তা ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ প্রণীত 'Beef in ancient India' 'প্রাচীন ভারতে গো-মাংস', 'সোহং স্বামী' গ্রন্থ গুলিতে আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের 'জাতি গঠনে বাধা' গ্রন্থে শ্যামাকান্ত বন্দোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাগুলিতে আর বেঙ্গলী পত্রিকায় পাঁচকড়ি বন্দোপাধ্যায়ের লেখা গো-মাংস বিষয়ক প্রবন্ধ ইত্যাদিতে পরিস্কার ভাবে উল্লিখিত আছে।

তখন গো-বলি, গো-হত্যা, গো-মেধ যজ্ঞ, গো-মাংস ভক্ষন মোটেই নিষিদ্ধ ছিল না। মধু ও ষাঁড়ের মাংস না খাওয়ালে অতিথির যত্নই হতো না। আজকের যুগে অতিথিকে যেমন চা না খাওয়ালে আতিথেয়তা হয় না ঠিক তেমনি তৎকালীন যুগে গোরুর মাংস না খাওয়ালে আতিথেয়তা হত না। তাই সেই যুগে হিন্দু গোহন্তা ও অতিথিকে 'গোঘ্ন' নামে অভিহিত করা হত। গো হত্যা বন্ধ হল বৌদ্ধ যুগ থেকে বৌদ্ধ শাসকরা যজ্ঞে পশুবলি, জীব হত্যা, মাংস ভক্ষন নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু বেদ, সংহিতা, সুত্রাদি গ্রন্থ হতে গোহত্যার বলিষ্ঠ প্রমানাদি রয়েছে। সেই প্রমানের ভিত্তিতেই নেপালের হিন্দুরা এখন ও গরুর বলি দেয় এবং দমে গরুর মাংস ভক্ষন করে। আমার মনে হয় নেপালীরাই সঠিক ভাবে হিন্দু ধর্ম পালন করে। হিন্দু ভায়েরা যদি একটু অতিতের দিকে ফিরে যান এবং বেদ, পুরান সংহিতা, সুত্রাদি গ্রন্থগুলি ভাল ভাবে দেখাশুনা করেন তাহলে তাঁরাও অতি সহজে বড়ো মজাদার গরুর গোস্তের কাবাব খাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করতে পারবেন। মুসলমানদের কাবাব খাওয়া দেখে আর মাথা গরম হবে না। আর ধৈর্য্যের চ্যুতি ঘটবে না।

তাই বলি সাম্প্রদায়িকতা বন্ধ করুন। তা নাহলে আপনাদেরকেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। মনে রাখবেন আপনারা যদি নিরীহ মুসলমানদের হত্যা বন্ধ না করেন আর সামান্য গরুর মাংস খাওয়ার অপরাধে হত্যালীলা চালিয়ে যান তাহলে এই ভারতবর্ষকে দারুল হারব ঘোষনা করতে বেশী দেরী লাগবে না। আর একবার যদি ভারতবর্ষকে মুফতীয়ানে কেরামরা দারুল হারব ফতোয়া দিয়ে দেন তাহলে মনে রাখবেন সালাহুদ্দীন আয়ুবী, সুলতান মাহমুদ, মুহাম্মাদ বিন কাসিমের উত্তরসুরীরা এখনও জীবিত আছে। বুদ্ধিমানদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।

আপনাদের শুভাকাংখী

মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
শালজোড়, বীরভূম (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)
মোবাইলঃ +৯১৮৯২৬১৯৯৪১০
হুয়াট্স এ্যপঃ +৯১৯৬৩৫৪৫৮৩৩১

Comments

Popular posts from this blog

তালিবানদের হাতে ইউহান রেডলীর ইসলাম গ্রহন

তসলিমা নাসরিন এবং মুত্রমনাদের গোমর ফাঁস করে ছেড়ে দিলেন ন্যাংটা সাজু

৯/১১ এর হামলার জন্য কি ওসামা বিন লাদেন দায়ী?