‘বন্দেমাতরম্’ গানটি গাওয়া উচিৎ নয় কেন ?

মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম

বলা হয়ে থাকে ‘বন্দে মাতরম’ গানটি নাকি দেশাত্মবোধক গান। বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই গানটি রচনা করে দেশবাসীকে উদ্ভুদ্ধ করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। আমার বক্তব্য হল। এই কথাটি ষোল আনাই মিথ্যা। এই গানটি কোনদিনই দেশাত্মবোধক গান নয়। কারন এই গানটির রচয়িতা বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রথম শ্রেণীর চামচা বা পদলেহী ব্যাক্তি। তাহলে তাঁর লেখা গান দেশাত্মবোধক কিভাবে হতে পারে?

আসুন আমরা দেখি ঋষি বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কতখানি দেশদ্রোহী বা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রথম শ্রেণীর চামচা ছিলেন।
যে উপন্যাসটির মধ্যে ঋষি বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘বন্দে মাতরম’ গানটি লিখেছেন সেটি হল ‘আনন্দমঠ’। এই ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ব্রিটিশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের জয়গানই গেয়েছেন। এবং তিনি এই উপন্যাসে স্বীকার করেছেন যে মুসলমানদের কাছ থেকে শাসন সাম্রাজ্য কেড়ে হিন্দুরাই ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিয়েছে। তিনি লিখেছেন,

“মুসলমানদের পর ইংরেজ রাজা হইল, হিন্দু প্রজা তাহাতে কথা কহিল না। বরং হিন্দুরাই ডাকিয়া রাজ্যে বসাইল। হিন্দু সিপাহি ইংরাজের হইয়া লড়িল। হিন্দুরা রাজ্য জয় করিয়া ইংরাজকে দিল। কেননা হিন্দুর ইংরাজের উপর ভিন্ন জাতির বলিয়া কোন দ্বেষ নাই । আজিও ইংরাজের অধীন ভারতবর্ষে (হিন্দু) অত্যন্ত প্রভুভক্ত।” (আনন্দমঠ)

যেসব জমিদার ইংরেজ আমলে ভারতীয়দের উপর অত্যাচার করত তাদের প্রশংসা করতে গিয়ে বঙ্কিমবাবু লিখেছেন,
“আমরা জমিদারের দ্বেষক নহি। কোন জমিদার কর্তৃক কখনো আমাদিগের অনিষ্ট হয় নাই । বরং অনেক জমিদারকে আমরা প্রশংসাভাজন মনে করি ।” (বঙ্কিম রচনাবলী, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৯২, ২৯৭)

জমিদার সম্পর্কে বঙ্কিমবাবু আরও লিখেছেন, “যাঁহারা জমিদারদিগকে কেবল মিথ্যা নিন্দা করেন আমরা তাঁহাদের বিরোধী । জমিদারদের দ্বারা অনেক সৎ্কার্য হইতেছে।” (দ্রঃ বঙ্কিম রচনাবলী)

ইংরেজ ও জমিদারদের অত্যাচারকে সমর্থন করে বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “অনেক জমিদারীর প্রজাও ভাল নহে। পীড়ন না করিলে খাজনা দেয়না। সকলের উপর নালিশ করিয়া খাজনা আদায় করিতে গেলে জমিদারের সর্বনাশ হয়।” (দ্রঃ বঙ্কিম রচনাবলী, পৃষ্ঠা-২৯৮)

বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সমর্থক ছিলেন না। এমনকি তাঁর বন্ধু দ্বীনবন্ধু মিত্র যে নীলকরদের বিরুদ্ধে ‘নীলদর্পণ’ লিখেছিলে সেটাকেও বঙ্কিম চন্দ্র সমর্থন করতে পারেন নি। সৌ্রেন্দ্রৌমোহন গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, “বাংলার সমকালীন বুদ্ধি জীবীদের মতো তিনিও (বঙ্কিম চন্দ্র) সিপাহি বিদ্রোহকে সমর্থন করেন নি। আমার দ্বীনবন্ধু মিত্রের একান্ত বান্ধব বঙ্কিমচন্দ্র নীলকরদের অত্যাচার প্রত্যক্ষ করেও সে বিষয়ে নীরব থাকেন।” (বাঙালীর রাষ্ট্রচিন্তা, পৃষ্ঠা-১১৬, ১৪৩)

বঙ্কিম চন্দ্র এবং তাঁর পরিবার ইংরেজদের যে পদে ছিলেন তাও লক্ষ করার মত। বঙ্কিম চন্দ্র সম্ভান্ত বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ইংরেজ সরকারের ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন। পরে ইংরেজ সরকার তাঁর কাজে খুশী হয়ে তাঁকে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট করে দিয়েছিলেন। তৎকালীন যুগে ভারতীয়দের পক্ষে এই পদটি পাওয়া খুব সহজসাধ্য ছিল না । ইংরেজদের প্রথম শ্রেণীর চামচা না হলে এই পদ ভারতীয়দের দেওয়া হত না। বঙ্কিম চন্দ্রের বড় ভাই শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায়ও ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট হতে পেরেছিলেন ইংরেজদের চামচাগিরি করার জন্য। বঙ্কিম চন্দ্রের ছোট ভাই পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও ছিলেন ঐ ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট। সূনীল কুমার বসু লিখেছেন, “একই পরিবারে এতগুলি ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট সহসা দেখা যায় না। সেদিনের বিদেশী শাসনের যুগে ভারতীয়রা ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটের চেয়ে উচ্চতর পদ পাওয়ার আশা করতে পারতেন না।” (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পৃষ্ঠা-১৩)

প্রমান হয়ে গেল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কতখানি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের চামচা বা পদলেহি ছিলেন। তাঁর এই চামচাগিরির জন্য ব্রিটিশ সরকার সি আই ই উপাধি দিয়েছিলেন। যাঁরা শিক্ষিত ব্যাক্তি তাঁরা ভালভাবেই জানেই যে এই উপাধি কাদের দেওয়া হত। C.I.E পুরো কথাটা হলো Companion of the Indian Empire-যার বাংলা অর্থ হল, ভারত সাম্রাজ্যের সহযোগী। বলাবাহুল্য, তখন ভারত ছিল সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকারের হাতের মুঠোয়। সেই সময় এই উপাধি যাঁকে দেওয়া হয়েছিল তাকে দালাল ও পদলেহি বলতে আমাদের কোন দ্বিধা নেই।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এতটাই দেশদ্রোহী ছিলেন যে ইংরেজদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের হত্যাকারী ইংরেজদেরকে বিচারে মুক্ত করে দিতেন। যেহেতু বঙ্কিমচন্দ্র ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন।

ঐতিহাসিক সুপ্রকাশ রায় লিখেছেন, “(বিপ্লবী) রহিমুল্লাহকে হত্যার ব্যাপারে খুলনার ম্যাজিষ্ট্রেট বঙ্কিমচন্দ্রকে এক লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণে বাধ্য করা হয় এবং হত্যাকারী হেলিকে বিচারে মুক্তি দেওয়া হয়।” (ভারতের কৃষক বিদ্রোহ, পৃষ্ঠা-৪১৩)
দেখা যায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গুরু ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। এই ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তৎকালীন ভারতবর্ষে খ্যাতনামা কবি ছিলেন, এবং তিনি ব্রিটিশদেরকে প্রভূ ভাবতেন। এবং নিজেকে ইংরেজদের পালতু কুত্তা মনে করতেন। এই ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত এতটাই প্রভূভক্ত ছিলেন যে শেষ পর্যন্ত ইংরেজ প্রভূদের প্রশংসায় কবিতা লিখেছিলেন। তিনি লিখেছেন,

“চিরকাল হয় যেন ব্রিটিশের জয়!
ব্রিটিশের রাজলক্ষ্ণী স্থির যেন হয়।।......”
“ভারতের প্রিয়পুত্র হিন্দু সমুদয়।
মুক্তমুখে বল সবে ব্রিটিশের জয়।।”
(দিল্লীর যুদ্ধ, গ্রন্থাবলী, পৃষ্ঠা-১৯১)

তিনি আরও লিখেছেন,

“জয় হোক ব্রিটিশের, ব্রিটিশের জয়।
রাজ অনুগত যারাঅ, তাদের কি ভয়।”
(গ্রন্থাবলী,পৃষ্ঠা-৩২০)

তাহলে আমনারাই বলুন, যিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রথম শ্রেণীর চামচা তাঁর লেখা ‘বন্দেমাতরম্’ গান ভারতীয়দের গাওয়া উচিৎ কি না? আমি বলব কখনোই উচিৎ নয়। যারা এই গান গায় তারা দেশদ্রোহী। আর দেশদ্রোহীদের যারা সমর্থন করে তারাও দেশদ্রোহী। দেশদ্রোহীদের একটি লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা উচিৎ।

মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
বীরভূম, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত
মোবাইলঃ +৯১ ৮৯২৬১৯৯৪১০
E-Mail :-md.abdulalim1988@gmail.com

Comments

Popular posts from this blog

তালিবানদের হাতে ইউহান রেডলীর ইসলাম গ্রহন

তসলিমা নাসরিন এবং মুত্রমনাদের গোমর ফাঁস করে ছেড়ে দিলেন ন্যাংটা সাজু

৯/১১ এর হামলার জন্য কি ওসামা বিন লাদেন দায়ী?